সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ উপরে পলিথিনের ছাউনি, তাতে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে নিচে। চারপাশে সুপারি পাতার বেড়া দেওয়া রয়েছে। তাও আবার জরাজীর্ণ, তাকে উই পোকায় ধরেছে। কালো স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে সুপারি পাতার বেড়াও। একটি চৌকিতে বসবাস করেন ফাতেমা বেগম পারুল (৪০)। চৌকির পাশেই রয়েছে রান্না করার চুলা।
পারুলের ডান পাশ পুরোটাই অবশ। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় মুখেও কথা বলতে পারেন না তিনি। বৃষ্টিতে ভিজে, রান্নার ধোঁয়ার কষ্ট সহ্য করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন নিঃসন্তান, স্বামী পরিত্যাক্ত, শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী পারুল। ঝালকাঠি সদর উপজেলার বৈদারাপুর গ্রামে এমনভাবেই অমানবিক মানবেতরভাবে জীবন-যাপন করছেন তিনি।
বৈদারাপুর গ্রামের মৃত ওসমান খানের দুই সন্তানের মধ্যে পারুল ছোট। বড় ছেলে হাবিব খান ওরফে হাবিব ফকির দিনমজুর। পৈত্রিক বসতভিটা ছাড়া তাদের আর কোনো জমি-জমা নেই। ২০০৭ সালের সিডরে বসবাসের ঝুপড়ি ঘর ভেঙে যাওয়ায় সরকারিভাবে ত্রাণ তহবিলের মাধ্যমে পাওয়া এক কক্ষ বিশিষ্ট টিন শেডে শিশু সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন হাবিব।
হত দরিদ্র হওয়ায় একটি খাট বা চৌকি কিনে তার উপর ঘুমানোর সামর্থ নেই তার। অসহায় বোনকে থাকার জন্য একটি চৌকি কিনে দিয়ে তিনি এখন আরেকটি কেনার সামর্থ হয়ে ওঠেননি। ফলে স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে মাটির ঘুমাতে হয় তাদের। আবেগাপ্লুত হয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন হাবিবের স্ত্রী মনজু বেগম।
মনজু বেগম আরো জানান, ননদ পারুল বেগম জন্ম থেকেই বাক-প্রতিবন্ধী। ভোলায় তাকে বিবাহ দেওয়া হয়েছিল। স্বামী সংসারের প্রতি উদাসীন হওয়ায় তার তেমন খোঁজ-খবর রাখতেন না। অনাহারে/অর্ধাহারে স্বামীর সংসারে দিনাতিপাত করতো। একপর্যায়ে কষ্ট সইতে না পেরে সংসার ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে গৃহপরিচারিকার কাজ করতো। বছর দেড়েক পূর্বে স্ট্রোক করে তার ডান পাশ অবশ হয়ে যায়। চলাফেরা করতে পারে না। কথাও বলতে পারে না।
বৈদারাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন জানান, পারুল বেগমের অসহায়ত্বের বিষয়টি আগ থেকেই নলেজে আছে। যখন ভিজিএফ ও ভিজিডি দেওয়া হয়েছে তখন পারুল এলাকায় আসেননি। বরাদ্দের পরে পারুল এলাকায় আসার তার সার্বিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। পরবর্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সহায়তার কোনো সুযোগ আসলে পারুলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
গাবখান ধানসিড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন জানান, সিডরের সময় ঘর পড়ে যাওয়ায় ত্রাণ তহবিলের আওতায় একটি ঘর দেওয়া হয়েছিল। তখন পারুল শ্বশুরবাড়িতে ছিল। বর্তমানে কি অবস্থায় আছে তারা তা আমার জানা নেই। আমি ইউপি সদস্যকে খোজ খবর নিতে বলেছি। প্রয়োজনানুযায়ী সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply